শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'লালু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা






গুরুদেব ও লালু অংশের কাহিনী অবলম্বনে


শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'লালু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা :

'লালু' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা অন্যতম ছোট গল্প। এই গল্পটি কিশোরদের ভীষণ প্রিয় কারণ গল্পের প্রধান চরিত্র লালু একজন সাহসী কিশোর। তার ছেলেবেলার নানা দৌরাত্ম্যের গল্প রয়েছে এই ছোটোগল্পে। আমাদের পাঠ্য অংশটি কেবল লালু এবং গুরুদেবের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এইটুকু অংশের বিবেচনাতেই গল্পের নামকরণ 'লালু' কতখানি সার্থক তা আমরা তুলে ধরবো।

গল্পের শুরুতেই আমরা দেখতে পাই লালুর মা নন্দরানী লালুকে নিয়ে ভীষণভাবে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিন দিন লালুর দুষ্টুমি বেড়েই চলেছে কিছুতেই তাকে রোখা যাচ্ছে না। পড়াশোনাতেও লালুর একদম মন নেই। বাড়িতে টিউশন দেওয়া হয়েছে কিন্তু লালুর মন কেবল নতুন নতুন ফন্দি ফিকির আটতে ব্যস্ত থাকে। এমত অবস্থায় লালু যখন জানতে পারে যে মায়ের গুরুদেব আসছেন কাশি থেকে ফেরার পথে মাকে আশীর্বাদ করে যাবেন। তখন গুরুদেব কে জব্দ করার জন্য সে মাথায় ফন্দি আঁটে। গুরুদেব আসার পর লালুর মা তাঁকে ভীষণ যত্ন করে খাওয়া-দাওয়া করান এবং গুরুদেব উপরে উঠতে পারবে না বলে নিচের তলায় সুন্দর করে তাঁর শয়নে ব্যবস্থা করেন। লালু একটি কাপড়ের পুটলিতে বরফের টুকরো বেঁধে গুরুদেবের মশারিতে চালে রেখে দেয় এবং সারারাত সেই বরফের টুকরো থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল গুরুদেবের পেটের উপর পড়তে থাকে। গুরুদেব নাজেহাল হয়ে সারারাত একবার এপ্রান্ত একবার ওপ্রান্ত খাট সরাতে থাকেন কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারে না যে আসলে বরফের টুকরোটি তাঁর মশারির চালেই রয়েছে। বাইরের উঠোনে এসে বসে এবং সেখানে মশার কামড় খেতে থাকে। নন্দরানী সকালবেলা উঠে যখন গুরুদেবের এই অবস্থা দেখে তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন। গুরুদেব জানান যে নন্দরাণীর বাড়ির ছাদ ফেটে গেছে সেখান থেকে সারারাত জল পড়েছে। তখন নন্দরানী জানান যে এর উপরেও আরো দুটো ঘর রয়েছে। কীভাবে ছাদ ভেঙে জল পড়া অসম্ভব! তারপর গুরুদেবের ঘরে গিয়ে মশারির চাল থেকে উদ্ধার করে একটি ভেজা ন্যাকড়ায় সামান্য কিছু বরফের টুকরো তখনও আস্ত আছে। নন্দরানী বুঝতে পারে পুরোটাই লালুর কর্ম এবং ছেলের ব্যবহারে তার লজ্জায় মাথা কাটা যায়। গুরুদেব লালুর বুদ্ধির প্রশংসা করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেয় এবং নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য তিনি মনে মনে লজ্জা পান।

আমাদের পাঠ্য গল্পের এই অংশটিতে লালুই প্রধান চরিত্র এবং পুরো ঘটনাটাই লালুকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে। গল্পটা জুড়েই আমরা লালুর দৌরাত্ম্য এবং কূট বুদ্ধির পরিচয় পাই। লালু না থাকলে গল্পটি একেবারে নিরস হয়ে পড়তো। লালুই গল্পে প্রাণ সঞ্চার করেছে। এবং গল্পের শেষে লালুর যে চমৎকার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় আমরা পাই তার প্রশংসা কিন্তু গুরুদেব করেছেন। এসব থেকে বোঝা যায় এটি একটি চরিত্র কেন্দ্রিক গল্প। তাই প্রধান চরিত্র হিসেবে গল্পের নামকরণ লালু সর্বতোভাবে সার্থক।

Comments