সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'আঠারো বছর বয়স' কবিতার সারাংশ







 'আঠারো বছর বয়স'


         সুকান্ত ভট্টাচার্য



'আঠারো বছর বয়স' কবিতার বিষয়বস্তু:


উঃ আঠারো বছর বয়স কৌশর পেরিয়ে যৌবনে উত্তরণের বয়স। প্রত্যেক মানুষের জীবনে আসে এই দুর্জয়-দুর্বার-গতিশীল আঠারো বছর বয়স। এ বয়স দুঃসহ এবং স্পর্ধায় মাথা উঁচু করে চলার ঝুঁকি নেয়।এই বয়সে অহরহ পৃথিবীর যে কোনও কর্মে দুর্বার দুঃসাহসিকতা নিয়ে এগিয়ে যায়। এ বয়সের প্রাণশক্তি দুর্জয়, নির্ভীক পদাঘাতে প্রস্তর কঠিন বাধাকে ভেঙে গিয়ে যায়। এ বয়সের কেউ মাথা নত করতে জানে না গর্বোদ্ধত শির উঁচু করে এরা এগোয়। এরা জানেনা কাঁদতে, এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য তাই সভ্যতার যাত্রা পথে আত্মত্যাগের মাধ্যমে শুভ দিনকে আহ্বান করে। এ বয়সের দুর্বার প্রাণশক্তি অন্তহীন প্রেরণায় দুরন্ত গতিশীল বাষ্পযানের মতো এগিয়ে চলে। এ বয়স যেমন প্রাণ নেয় তেমনি আত্মদানের মাধ্যমে নিজেদের উৎসর্গ করতে দ্বিধা করে না। বিশ্ব মানবের কল্যাণে এ বয়স শপথ নিতে পিছুপা হয়না। এই আঠারো বছর বয়স অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এদের তরুণ তাজা প্রাণের মর্ম গভীরে উপলব্ধি করে অসহ্য যন্ত্রণা। এ বয়সে প্রাণ যেমন তীব্র তেমনি প্রখর এই বয়সেই আসে নতুন নতুন কর্মের আহ্বান। এই আঠারো বছর বয়স দুর্বার, নতুন স্বপ্নের সাধনায়, নতুন কর্মোদ্যোগের রূপায়নে, চলার পথে অনেক ঝড় তোলে, ভেঙে ফেলে প্রবল বাধা-বিপত্তি‌। বাইরের প্রবল আঘাতে আর অন্তরের প্রাণ-প্রাচুর্যে চলার পথ অনেক সময় পথভ্রষ্ট হয়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়। এ বয়স জানে না থামতে। তাই চলার পথে অবিশ্রান্ত আঘাত আসে। ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসের বয়স বেদনায় জর্জরিত হয়।

তবুও এ বয়সের মধ্যে কবি জয়ধ্বনি শুনেছেন। কেননা ব্যথা, বেদনার আঘাতে অথবা ব্যর্থতার গ্লানিতে বিধ্বস্ত হয়ে হারিয়ে যাওয়া আঠারো বছর বয়সের ধর্ম নয়। এ বয়সে যতই ঝড় আসুক না কেন দুর্মর প্রাণশক্তিতে তাকে প্রতিহত করার দুর্জয় শক্তি এদের মধ্যে আছে। এরা সবসময় নতুন কিছু করে। নবচেতনার স্বপ্নে সহস্র বাধাকে পা মাড়িয়ে যাওয়ার সাহস ও শক্তি এদের মধ্যে আছে। কোনো সংশয় বা দ্বিধা এদেরর হৃদয়কে বিচলিত করতে পারে না। এরা ভীরু কাপুরুষ নয়। তাই কবির প্রত্যাশায় পরাধীন দেশে, সমাজ জীবনে, জড়তাগ্রস্ত দেশে আঠারো বছর বয়স নেমে আসুক।

Comments