মাধ্যমিক বাংলা প্রজেক্ট ২০২২ 'আফ্রিকা' ও 'পথের দাবী' রচনার ভাবগত মিল।

 



'আফ্রিকা' ও 'পথের দাবী' রচনার ভাবগত মিল আলোচনা করো।


উত্তর : আফ্রিকা কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। এটি একটি সাম্রাজ্যবাদী কবিতা। পথের দাবী হল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লেখা একটি রাজনৈতিক উপন্যাস। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন গোত্রের সাহিত্য মাধ্যম হলেও একটি বিশেষ ভাগগত মিল লক্ষ্য করা যায়।


এই দুটি রচনা প্রধান ভাবগত মিল হলো সাম্রাজ্যবাদ।

আফ্রিকা কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আফ্রিকাকে মানব রূপের কল্পনা করে তার ভিতরের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। এই কবিতার মাধ্যমে কবি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। একইভাবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' উপন্যাসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সব্যসাচী চরিত্রের মধ্যে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মুখে তীব্র চপেটাঘাত করে। এই রচনায় অপূর্ব একজন সাধারণ চাকরিজীবী মানুষ হলেও সে কখনোই ছাপোষা নয়। কলেজ জীবনে এক সময় সে নিয়মিত রাজনীতি করতো। সংসারের চাপে চাকরি নিতে বাধ্য হলেও সে মনে মনে সব্যসাচীকে শ্রদ্ধা করতো। সে চেয়েছিল সব্যসাচীর মাধ্যমেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অবক্ষয় হোক এবং এক নতুন পৃথিবীর জন্ম হোক।

একইভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও চেয়েছিলেন আফ্রিকা চিরকাল যেন অতল অন্ধকারে অন্ধকার ডুবে না থাকে, সে তার ভয়াল ও বিধ্বংস রূপ দিয়ে যেন সমস্ত সাম্রাজ্যবাদের অবসান ঘটায় এবং  পৃথিবীতে নতুন উদাহরণ উপস্থাপন করুক।


দুটি রচনার পাশাপাশি কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরে আমরা সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব আলোচনা করব:


('আফ্রিকা')

১. "অপরিচিত ছিল তোমার

মানব রূপ উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।"

২. "এলো ওরা লোহার হাত করে নিয়ে,

এলো মানুষ ধরার দল।"

৩. "সভ্যের বর্বর লোভ

নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।"


('পথের দাবী')

১."অপূর্ব প্রথম শ্রেণীর যাত্রী, তাহার কামরায় আর কেহ লোক ছিল না।"

২. "বর্মার সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব কটু কণ্ঠে জবাব দেয়, তুমি তো ইউরোপিয়ান নও"।

৩. "আমি পুলিশ ইচ্ছা করলে আমি তোমাকে টেনে নীচে নামাইতে পারি।"


এই দুটি রচনার লাইনগুলি সূক্ষ্মভাবে পাঠ করলে আমরা দেখতে পাব সাম্রাজ্যবাদী শোষণের চিত্র স্পষ্ট।ছাড়াও রয়েছে বৈষম্য, অত্যাচার ও ক্ষমতাশালী মানুষের বর্বর মানসিকতার পরিচয়। পুলিশ শুধুমাত্র ক্ষমতার জোরে সাধারণ মানুষের সাথে কিভাবে নিচ ও হীন ব্যবহার করছে তাই আমরা পথের দাবী রচনাংশে দেখতে পাই। আফ্রিকা কবিতাতে কবি বলেছেন 'মানুষ ধরার দল'। বর্তমান যুগে শুধুমাত্র এই শব্দটিতেই বোঝা যায় সাম্রাজ্যবাদ কতখানি মাথা ছাড়া দিলে মানুষ পণ্য হয়ে যায়। ভিন্নধারার ভিন্নসময়ের রচনা হলেও এই দুটি রচনাতেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ঔদ্ধত্য স্পষ্ট।



©সীমা ঘোষ দে


Comments