জসীমউদ্দিনের 'কবর' কবিতার সারাংশ লেখো।

 


জসীমউদ্দিনের 'কবর' কবিতার সারাংশ লেখো।


উত্তর:
কবি জসীমউদ্দীন গ্রাম বাংলার কবি। তাঁর 'কবর'কবিতাটি একটি করুণ রসের কবিতা। 'কবর' কবিতায় এক বৃদ্ধের পত্নী বিয়োগজনিত বেদনার প্রকাশ ঘটেছে। এই কবিতায় তিনি কথক এবং শ্রোতা হল তার নাতি। ৩০ বছর আগে বৃদ্ধ তার স্ত্রীকে হারান, ডালিম গাছের তলায় তার স্ত্রীর কবর। ৩০ বছর ধরে বৃদ্ধা এই কবরটিকে তার চোখের জলে ভিজিয়ে রেখেছেন। তার স্ত্রী যখন তার গৃহে বধূ হয়ে এসেছিল তখন তার পুতুল খেলার বয়স ছিল। পুতুলের বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় তার স্ত্রী চোখের জলে বুক ভাসাতেন। সেই বালিকা বধূ বাড়ির সর্বত্র ছুটোছুটি করে বেড়াতো। বৃদ্ধির সারা বাড়িতেই তার স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। সকালে বৃদ্ধ যখন নাঙল নিয়ে মাঠে যেতেন তখন তিনি বারবার বাড়ির দিকে ফিরে তাকাতেন সেই জন্য তার বৌদি তাকে নিয়ে কত ঠাট্টা তামাশা করত। এমনিভাবেই প্রতিদিনকার সুখ দুঃখের জীবনে তারা মিলেমিশে গিয়েছিলেন।

বাপের বাড়ি যাবার সময় তার স্ত্রী বৃদ্ধের দুটি পা জড়িয়ে ধরে তাকে উজানতলীর গ্রামে দেখতে যাবার জন্য অনুরোধ করত।
শাপলার হাটে তরমুজ বিক্রি করে ছ পয়সা লাভ হলে এক ছড়া পুতির মালা দেড় পয়সার তামাক ও মাজন কিনতেন তারপর সেগুলো গাঁটে নিয়ে সন্ধ্যাবেলা উজানতলী গ্রামে তার শ্বশুর বাড়ি যেতেন। এ কথা শুনে নাতি হাসলে বৃদ্ধ তাকে বলেন সেই তুচ্ছ তামাক মাজন পেয়েও তার স্ত্রী খুব খুশি হতো। তারপর নাকে নথ দুলিয়ে হেসে অভিমানে সুরে এতদিন পরে আসার জন্য অনুযোগ করতো। যে স্ত্রী তাকে না দেখতে পেলে ব্যথিত হতো সেই আজ তিরিশ বছর ধরে কবরের দেশে ঘুমিয়ে আছে বৃদ্ধ নাতিকে খোদার কাছে তার দাদীর আত্মার শান্তি কামনা করতে বলেছেন।

পত্নী বিয়োগের পর দীর্ঘদিন জীবন পথে অনেকেই আপন ভেবে কাছে টেনেছেন কিন্তু সবাই তাকে ছেড়ে চলে গেছে সারা জীবন তিনি কত মৃতদেহের উপর কাফান অর্থাৎ সাদা কাপড় বিছিয়ে দিয়েছেন। কত কবর নিজের হাতেই কেটেছেন তার কোন সংখ্যা জানা নেই। কত সুন্দর মুখ তিনি নিজের হাতে সমৃদ্ধ করেছেন এই মাটিতে। তিনি তাই খুব ভালোবাসেন মাটিকে, মাটিতে তপ্ত বুক রেখে ব্যথা প্রশমিত করতে চেয়েছেন এভাবেই দাদু ও নাতির কথোপকথন এবং পুরনো স্মৃতিচারণ 'কবর' কবিতাটি পাঠকের মনে চিরকালীন দরজা পেয়েছে।

Comments