বোধ কবিতার প্রশ্নোত্তর




জীবনানন্দ দাশের বোধ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ চারটি প্রশ্নোত্তর


১. বোধ কী?


উঃ যে চৈতন্য ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ জগতের পর্দা সরিয়ে দিয়ে পরাবাস্তব জগতে আর এক 'আমি'র সঙ্গে মুখোমুখি করিয়ে দেয় তাকেই কবি বোধ বলে চিহ্নিত করেছেন।


২. "সকল লোকের মাঝে বসে/আমার নিজের মুদ্রা দোষে/আমি একা হতেছি আলাদা?" কবি সকলের মাঝে থেকেও আলাদা কেন?

উঃ আধুনিক যুগে যান্ত্রিক সভ্যতার অভিঘাতে মানুষ হৃদয়ের সম্পর্ক থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে, এযুগের মানুষ অনেক বেশি স্বার্থপর। সমাজে বাস করে এই ধরনের মানুষদেরকে সম্পূর্ণ এগিয়ে চলার ক্ষমতা মনশীল কবির নেই আবার এদের এই যন্ত্র সর্বস্বতাকে সম্পূর্ণ মেনে নিতেও পারেন না তিনি - তাই এই সংশয় যুক্ত জিজ্ঞাসা চিহ্ন।


৩."তবু সে মাথার চারিপাশে!

   তবু সে চোখের চারিপাশে!

   তবু সে বুকের চারিপাশে!"

শব্দ প্রয়োগের তাৎপর্য দেখাও।

উঃ কোন অনুভূতি যখন কবি চিত্তে একেবারে দৃঢ়মূল হয়ে বসে যায় তখন সেই ভাব থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেন না। এই অতৃপ্তিগত বোধ তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। কবি যে উপলব্ধির মধ্যে নিমগ্ন হয়ে আছেন সেটি কি তিনি বারবার পাঠকের সামনে এনেছেন। সেই জন্যই 'তবু' অব্যয়টি এখানে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে।


৪. তবুও এই ভালোবাসা -ধুলো আর কাদা" ভালোবাসাকে কবি ধুলো আর কাদার  সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন কেন?

উঃ সংশয়ের দোলায় দোদুল্যমান হওয়ার জন্যই নারীকে কবি জীবনানন্দ বুদ্ধদেব বসুর 'বন্দীর বন্দনা'র মত দেহজ আকর্ষণে রোমান্টিকতার ভাবমানসে রাগ-অনুরাগের মধ্যে দিয়ে গ্রহণ করতে পারেননি। বার-বার হৃদয়ে আলোড়িত হয়েও তাই রক্তমাংসের নারী শেষ পর্যন্ত হয়ে গেছে কবির কাছে উপেক্ষিত। কবি ও তাই নারীর সঙ্গে শারীরিকভাবে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন। কামনা বাসনা রোমান্টিক ভাব বিলাসে ইন্দ্রিয়জ টানে কবি কখনোই হতে পারেননি আসক্ত। তাই নারীর নিছক দৈহিক ভালোবাসা কবির কাছে ক্ষণস্থায়ী হয়েই হাওয়াতে কর্পূরের মত শূন্যে বিলুপ্ত হয়েছে। তাই কবি পথের ধুলো কাদার মধ্যে ভালোবাসাকে মাখামাখি হতে দেখেন।



আলোচনায়: সীমা মিস

Comments