শাক্তপদাবলী/ হৃদয় রাসমন্দিরে দাঁড়াও মা আমার ত্রিভঙ্গ হয়ে






হৃদয় রাসমন্দিরে দাঁড়াও মা আমার ত্রিভঙ্গ হয়ে পদটির প্রশ্নোত্তর

১."হৃদয় রাস মন্দিরে দাঁড়াও মা আমার ত্রিভঙ্গ হয়ে" - পদটি কার লেখা কোন পর্যায় পদ?

পদটি নবাই ময়রার লেখা ভক্তের আকুতি পর্যায়ের পদ।

২. ত্রিভঙ্গ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

এখানে ত্রিভঙ্গ বলতে শ্রীকৃষ্ণর কথা বলা হয়েছে। ত্রিভঙ্গ কথার অর্থ হলো শরীরের তিন স্থানে বক্রতা যুক্ত।

ত্রিভঙ্গ বা ত্রিবঙ্গ হল একটি স্থায়ী শারীরিক অবস্থান বা অবস্থান যা ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় শিল্পকলা এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের ধরন যেমন ওড়িশিতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে শরীর হাঁটুতে এক দিকে, নিতম্বে অন্য দিকে এবং তারপরে আবার কাঁধে এবং অন্য দিকে বাঁকানো হয়।

৩. "নর কর কটি বেড়া, খুলে পর মা পীতধড়া"- তাৎপর্য লেখো।

এখানে পদকর্তা নবাই ময়রা মা কালীকে মানুষের হারের মালার পরিবর্তে শ্রীকৃষ্ণের মতো পীতধড়া বেঁধে এসে দেখা দিতে বলেছেন।


৪. "মাথায় দে মা মোহনচূড়া, চরণে চরণ থুয়ে"- সরলার্থ লেখো।

পদকর্তা নবাই ময়রা এখানে মা কালীকে আকুতি জানিয়েছেন মা যেন শ্রীকৃষ্ণের মতো মোহনচূড়াকরে চুল বাঁধেন এবং চরণের ওপর চরণ রেখে তাকে দর্শন দেন।

৫. "ত্যজী নর-শিরমালা, পর গলে বনমালা/একবার কালি ছেড়ে হও মা কালা"- তাৎপর্য লেখো।

এই চরণ দুটিতে নবাই ময়রা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে মা কালীর রূপকে একাত্ম করে দেখতে চেয়েছেন। তিনি মাকে অনুরোধ করেছে গলা থেকে মুণ্ডমালা খুলে দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের মতো যেন বনফুলের মালা গলায় ঝোলান, কালিরূপ ত্যাগ করে একবার যেন মা কালা অর্থাৎ কৃষ্ণ রূপ ধারণ করেন।

৬. "ওগো ও পাষাণের মেয়ে" - পদকর্তা কাকে কেন পাষাণের মেয়ে বলেছেন?

পদকর্তা নবাই ময়রা মা কালীকে পাষাণের মেয়ে বলে আখ্যায়িত করেছেন কারণ মা যেহেতু গিরিরাজ হিমালয়ের কন্যা তাই।


৭. "হৃদকমলে কালো শশী, আমি দেখতে খুব ভালোবাসি- কে কি দেখতে ভালোবাসেন?

পদকর্তা নবাই ময়রা এখানে তাঁর হৃদয় রূপ কমলে মা কালীর কালো মুখ দেখতে ভালোবাসেন তাঁর কাছে মায়ের এই ভুবন মোহিনী মুখ যেন কালো শশীর সদৃশ।


৮. "একবার ত্যজে অসি, ধর মা বাঁশী/ ভক্তবাঞ্ছা পুরাইয়ে"- 

এই চরণটিতে ভক্ত অর্থাৎ নবাই ময়রা মাকে অনুরোধ করেছেন সে যেন তার খাঁড়া পরিত্যাগ করে হাতে বাঁশি ধারণ করে ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে।


৯. "হৃদয় রাস মন্দিরে দাঁড়াও মা ত্রিভঙ্গ হয়ে"- পদটির ভনিতাটি লেখো।

ভনিতাটি হল- "একবার ত্যজে অসি, ধর মা বাঁশী/ ভক্তবাঞ্ছা পুরাইয়ে"


১০. "হৃদয় রাস মন্দিরে দাঁড়াও আমার ত্রিভঙ্গ হয়ে"- পদটির মধ্যে দিয়ে পদকর্তার কোন মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে?

এখানে পদকর্তার অসাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। শাক্ত কবি কালী ও কৃষ্ণকে একই পরম সত্যের ভিন্ন ভিন্ন রূপভেদ বলে মনে করেছেন। শাক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মের সমন্বয়ের সুর এখানে ফুটে উঠেছে।





Comments