লঙ্কাকাণ্ড

 কৃত্তিবাসে লঙ্কাকাণ্ড


১. “তোমার প্রসাদে মাতা জিনিল লঙ্কাপুরী। দুই ভাইকে আনিয়াছে কাঞ্চন নগরী ॥”

-কার উক্তি? তিনি কাকে মাতা বলে সম্বোধন করেছেন? দুই ভাই বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে?

* হনুমানের উক্তি। দেবী ভদ্রকালীকে তিনি মাতা বলে সম্বোধন করেছেন। দুই ভাই বলতে রাম-লক্ষ্মণের কথা বলা হয়েছে।

২. 'আমি তারে খাণ্ডায় কাটিব লঘুগতি। এখানে কে, কাকে কাটার কথা বলেছেন ?

* এখানে হনুমান মহীরাবণকে খাণ্ডায় কাটার কথা বলেছেন।

৩. অহীরাবণ কে? কিভাবে তাঁর জন্ম হয়, কার হাতে তাঁর মৃত্যু ?

* লঙ্কাধিপতি রাবণের পুত্র মহীরাবণ। সেই মহীরাবণের পুত্র হলেন অহীরাবণ। মহীরাবণের মৃত্যুর সময় অহীরাবণ মাতৃগর্ভে, মাত্র পাঁচ মাসের গর্ভস্থ শিশু। গর্ভবতী মহীরাবণ-পত্নী হনুমানের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকার সময় অহীরাবণের জন্ম। জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তিনি হনুমানের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং অমিত বিক্রমে যুদ্ধ করে হনুমানের হাতেই নিহত হন।

৪. “আমার বাপের তুমি বধিলা জীবন। তোর রক্তে করিব আজি বাপের তর্পণ ॥”—কার উক্তি? তাঁর বাপের নাম কী? কার রক্তে তিনি বাপের তর্পণ করতে চান ?

* অহীরাবণের উক্তি। তাঁর পিতার নাম মহীরাবণ। পিতৃহন্তা হনুমানের রক্তে তিনি বাপের তর্পণ অর্থাৎ পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে চান।

৫. বিভীষণের কন্যার নাম কী? হনুমান তাঁর কাছে কিজন্য গিয়েছিলেন ?

• বিভীষণের কন্যার নাম সানন্দা। হনুমান শিল-নোড়া চাইতে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন।

৬. চিত্রাঙ্গদা কে? তাঁর পুত্রের নাম কী ?

• লঙ্কাধিপতি রাক্ষসরাজ রাবণের এক পত্নী হলেন চিত্রাঙ্গদা। তাঁর পুত্রের নাম বীরবাহু। ১১১। “হাস্য পরিহাস করি লইয়া যুবতী।

৭. কে তোরে ঔষধ চিনা দিব রাতারাতি ॥”–কারা, কাকে কোন্ প্রসঙ্গে এই কথা বলেছিল?

* এই কথাগুলি গন্ধমাদন পর্বতের গন্ধর্বেরা বলেছিল হনুমানকে। হনুমান বিশল্যকরণী চিনতে না পেরে গন্ধর্বদের যখন অনুরোধ করেছিলেন বিশল্যকরণী চিনিয়ে দেবার জন্য তখন সেই প্রসঙ্গে গন্ধর্বেরা হনুমানকে এই কথাগুলি বলেছিলেন।

৮. হনুমান যখন যথাস্থানে গন্ধমাদন পর্বত রাখতে যাচ্ছিলেন তখন রাবণ হনুমানকে মেরে ফেলার জন্য সাতজন বীর রাক্ষসকে পাঠিয়েছিলেন, সেই সাতজন বীরের নাম লেখ।

• তালজঙ্ঘ, ঘটোদর, সিংহবদন, হস্তিকর্ণ, কৃশোদর, তাম্রবিলোচন ও উল্কামুখ- এই সাত বীরকে রাবণ পাঠিয়েছিলেন।

৯ মহীরাবণ কে? তাঁর পিতার নাম কী? ব্রহ্মা তাঁকে কি জন্য অভিশাপ দিয়েছিলেন?

* মহীরাবণ হলেন শত্রুধনু নামে এক শাপভ্রষ্ট গন্ধর্ব। তাঁর পিতার নাম রাবণ। শত্রুধন নামে এক গন্ধর্ব দেবসভায় নৃত্য করবার সময় এক অপ্সরীকে দেখে নৃত্যের তালভঙ্গ করেন। ব্রহ্মা তখন তাঁকে রাক্ষসরূপে মর্ত্যলোকে জন্মগ্রহণ করার অভিশাপ দেন।

রাবণ বলির কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে প্রত্যাবর্তন করার সময় গৌতম পত্নী অহল্যাকে দেখে এমনই কামমোহিত হয়ে পড়েন যে সেখানেই তাঁর বীর্য স্খলিত হয়ে পড়ে। সেই বীর্যে অভিশপ্ত শত্রুধনু জন্মগ্রহণ করেন, তাঁরই নাম মহী। রাবণ মহীরাবণকে সঙ্গে করে লঙ্কাপুরীতে নিয়ে এসে প্রতিপালনের জন্য মন্দোদরীর হস্তে অর্পণ করেন।

১০. মায়াদানব কে? তাঁর পুত্রকন্যাদের নাম কী ? ময়দানবের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

• ময়দানব দানবপতি ও দানবশিল্পী। তাঁর দুই পুত্রের নাম—মায়াবী এবং দুন্দুভি। কন্যার নাম মন্দোদরী, রাবণের স্ত্রী। ময়দানব ছিলেন মুনিবর কৌণ্ডিল্যের অন্তরঙ্গ বন্ধু। দৈত্যরাজ বলির সঙ্গে স্বর্গ জয় করতে গিয়ে ময় দেবশিল্পী বিশ্বকর্মাকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। হেমা নাম্নী অপ্সরার গর্ভে তাঁর কন্যা মন্দোদরীর জন্ম হয়। মন্দোদরীর সঙ্গে রাবণের বিয়ে দিয়ে যৌতুকস্বরূপ তিনি জামাতাকে তাঁর বিখ্যাত অস্ত্র শক্তিশেল প্রদান করেন কৃষ্ণার্জুনের খাণ্ডব দাহনের সময় তিনি সেখান থেকে পালাবার চেষ্টা করলে কৃষ্ণার্জ কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে অর্জুনের শরণাপন্ন হলে, অর্জুনই তাঁর প্রাণরক্ষা করেন। তারই প্রতিদাে শ্রীকৃষ্ণের আদেশে তিনি ইন্দ্রপ্রস্থে পাণ্ডবদের জন্য সভাগৃহ তৈরি করে দিয়েছিলেন

১১ 'ভুলিল আমার মন রাণ্ডির বচনে।'—এখানে রাণ্ডি বলতে কাকে বোঝ হয়েছে? তার কথায় কার মন ভুলেছিল ?

• এখানে রাণ্ডি বলতে শূর্পণখার কথা বোঝান হয়েছে। তাঁর কথায় রাবণের ভুলেছিল।

১২. রাবণ মহীরাবণকে কোথাকার রাজা করে দেন? সেখানকার দেবীর নাম * রাবণ মহীরাবণকে পাতালপুরীর অন্তর্গত কাঞ্চন নগরের রাজা করে দেন। সেখান দেবীর নাম ভদ্রকালী ।

১৩. 'নর-বানর যবে আসিবে তোর পাশ।

সেইকালে রাজ্য তোর হইবেক বিনাশ ॥ ”

কে কাকে এই কথা বলেছিলেন? প্রজাপতি ব্রহ্মা এই কথা বলেছিলেন অভিশপ্ত শত্রুধনুকে। যে শত্রুধনু রাবনের পুত্র মহীরাবণ হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করবেন।

১৪. "আমার বাপের তুমি বধিলা জীবন।

তোর রক্তে করিব আজি বাপের তর্পণ।।" - কার উক্তি তাঁর বাপের নাম কি? কার রক্তে তিনি বাপের তর্পণ করতে চান?

*অহিরাবনের উক্তি। তাঁর পিতার নাম মহিরাবন। পিতৃহন্তা হনুমানের রক্তে তিনি বাপের তর্পণ অর্থাৎ তৃপ্তি হত্যার প্রতিশোধ নিতে চান।

১৫. মকরাক্ষ কে? তাঁর এরূপ নামের কারন কী? লঙ্কার যুদ্ধে কিভাবে তাঁর মৃত্যু হয়?

* মকরাক্ষ রাক্ষসের পুত্র ও রাক্ষসরাজ রাবনের সেনাপতি। কুম্ভকর্ণের দুই পুত্র কুম্ভ ও নিকুম্ভের মৃত্যুর পর রাবণ লঙ্কার যুদ্ধে মকরাক্ষকে প্রেরণ করেন। মকরাক্ষ অমিত বিক্রমে ভীষণ যুদ্ধ করতে করতে শেষ পর্যন্ত শ্রী রামের বানে মৃত্যুবরণ করেন। মকরের ন্যায় অক্ষি অর্থাৎ চোখ ছিল বলে তার নাম মকরাক্ষ।


শিক্ষিকা :  সীমা ঘোষ ( বাংলা অনার্স, এম. এ, বি এড)

Comments